শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষা। ঠিক তার আগমুহূর্তে সমতায় ফেরার দারুণ সুযোগ পায় আল নাসর। এগিয়ে গেলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, যে ক্লাবের হয়ে আগে কখনো পেনাল্টিতে ব্যর্থ হননি পর্তুগিজ সুপারস্টার। আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতেই শট নিলেন তিনি। বল উড়ে গেল ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
কখনো খুদে জাদুকর কখনোবা এলিয়েন। প্রায় দুই দশক ফুটবলপ্রেমীদের বুঁদ করে রেখেছিলেন ডান আর বাম পায়ের জাদুতে। ক্যারিয়ারের শেষলগ্নেও এখনো তারা থেকে মহাতারকা হয়ে ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কিন্তু বয়স তো কখনো আপস করে না। নক্ষত্রেরও একদিন পতন হয়।
এমেরিক লাপোর্তের গোলে জয়ের পথেই ছিল আল নাসর। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে নিজেদের জালে বল জড়িয়ে আল শাবাবকে সমতার সুযোগ করে দেন আল নাসরের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আলী আল হাসান। কিন্তু যোগ করা সময়ে পেনাল্টি থেকে গোল করে আল নাসরকে ২-১ ব্যবধানের স্বস্তির জয় এনে দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। একদম শেষ সময়ে পেনাল্টি
মেজাজ হারানোর ঘটনা কি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাছে একেবারে নতুন? মোটেই তা নয়। গোল করতে না পারার হতাশা বা মাঠের কোনো সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে তৎক্ষণাৎ ক্ষোভ ঝারতে দেখা যায় তাঁকে। পর্তুগিজ তারকা ফরোয়ার্ডের কাছে তখন সেটা কোন টুর্নামেন্ট, তাতে যায় আসে না।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গত বছর কেটেছিল দুর্দান্ত। গোল যেমন করেছেন, তেমনি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন। তবে পর্তুগালের জার্সিতে এ বছর সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। হতাশাজনক ইউরোতে একটা গোলও করতে পারেননি।
গোল করে আকাশের দিকে তাকালেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। দুই হাত প্রসারিত করেন। চোখও ছলছল করছিল পর্তুগিজ তারকা ফরোয়ার্ডের। দূর আকাশের তারা হয়ে যাওয়া বাবার কথা রোনালদো স্মরণ করলেন এভাবেই।
এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচে ছিলেন নিষ্প্রভ। তবে প্রিমিয়ার লিগে ফিরতেই স্বরূপে ফিরলেন আর্লিং হালান্ড। পেলেন গোলের দেখা। গতকাল ঘরের মাঠ ইতিহাদে আর্সেনালের বিপক্ষে ৯ মিনিটে ম্যানচেস্টার সিটিকে এগিয়ে দেন নরওয়েজীয় স্ট্রাইকার। ম্যাচটিতে অবশ্য শেষ মুহূর্তের গোলে হার এড়িয়েছে গত চারবারের লিগ চ্যাম্
গোল ছাড়া যেন কিছুই বোঝেন না আর্লিং হালান্ড। ম্যানচেস্টার সিটিতে এসে তিনি মেতেছেন রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায়। সিটিজেনদের হয়ে গোলের সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন নরওয়ের এই স্ট্রাইকার।তাঁর (হালান্ড) সঙ্গে, পরে সব খানেই আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
৯০০ গোল! ক্যারিয়ারে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়ে কে এত বেশি গোল করেছেন! ফুটবলের পরিসংখ্যান রাখা শুরুর পর পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের চেয়ে বেশি গোল করতে পারেননি কেউ। আন্তর্জাতিক বিরতিতে গত সপ্তাহে উয়েফা নেশনস লিগে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ১ গোল করে প্রথম ফুটবলার হিসেবে ৯০০ গোলের কীর্তি গড়েন রোনালদো।
রেকর্ড গড়া যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সবচেয়ে প্রিয় কাজ। মাঠের ফুটবলে তিনি গড়েছেন অজস্র রেকর্ড। সামাজিক মাধ্যমে তিনি এমন এক প্রথমের রেকর্ড গড়েছেন, যেখানে শুধুই আছে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের নাম।
এক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর যে কত রূপ। রেকর্ড তো তিনি হরহামেশাই করেন। দলের প্রয়োজনে কখনো তিনি হয়ে ওঠেন ‘সুপার সাব’। উয়েফা নেশনস লিগের গত রাতের ম্যাচে যে সিআর সেভেনকে দেখা গেছে এই রূপে।
ক্লাব ফুটবলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জেতেন একের পর এক শিরোপা। গোলের বন্যা বইয়ে দেওয়া রোনালদো আন্তর্জাতিক ফুটবলেও সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে পর্তুগালের জার্সিতে কোনো বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তাঁর। আন্তর্জাতিক ফুটবলে জিতেছেন ইউরো, উয়েফা নেশনস লিগের শিরোপা।
লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মধ্যে ব্যালন ডি’অর নিয়ে চলে তুমুল প্রতিযোগিতা। একবার মেসি পান তো, আরেক বার রোনালদো। তবে এবার ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নেই মেসি-রোনালদোর কেউই। ২০০৩ সালের পর যা ঘটল প্রথমবার।
কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের সঙ্গে তরুণদের তুলনা তো নতুন কিছু নয়। ক্রিকেট, ফুটবলসহ বেশিরভাগ খেলায় ঐতিহ্যবাহী দল, ক্লাবগুলোতে এমন তুলনা হয়ে থাকে। রিয়াল মাদ্রিদে কিলিয়ান এমবাপ্পে আসার পর অনেকেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর উত্তরসূরী মনে করেন তাঁকে (এমবাপ্পে)। তবে এমবাপ্পে জানালেন, ঐতিহ্যবাহী ক্লাবে নিজের স্বকীয়তা ধর
চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল ও উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের জন্য বিশেষ পুরস্কার দেবে উয়েফা। তার জন্য গতকাল মোনাকোর গ্রিমালদি ফোরামে হাসিমুখে হাজির হলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। প্রথমবারের মতো হতে যাওয়া ৩৬ দলের চ্যাম্পিয়নস লিগ ড্র অনুষ্ঠানে ভক্ত-সমর্থকদের সঙ্গেও সেলফিবন্দী হতে দেখা গেল তাঁকে।
মোনাকোর গ্রিমালদি ফোরামে ২৯ আগস্ট ২০২৪-২৫ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ ড্র অনুষ্ঠানে দেওয়া হবে এক বিশেষ পুরস্কার। উয়েফার এই বিশেষ সম্মাননা জানানো হবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। গতকাল নিজেদের ওয়েবসাইটে এমনটাই জানিয়েছে ক্লাব ফুটবলে সর্বোচ্চ সংস্থাটি।
সৌদি সুপার কাপ ফাইনালে আল নাসরের হারের রেশ এখনো কাটেনি। হারের হতাশা তৎক্ষণাৎ প্রকাশ করেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সেই ক্ষত না শুকাতেই রোনালদোর দলকে ফিরতে হলো মাঠের খেলায়। এবারও জয় পাওয়া হলো না আল নাসরের।